এখানেই বিনোদন

কিংবদন্তি সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলীর জন্মদিন আজ


বাংলাদেশি সংগীত জগতের কিংবদন্তি সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলীর জন্মদিন আজ (২৪ ডিসেম্বর)। ১৯৫২ সালের আজকের দিনেই পৃথিবীতে এসেছিলেন তিনি। বেঁচে থাকলে আজ ৭১ বছরে পা দিতেন আলাউদ্দিন আলী।

পুরো সত্তর দশক নিজের সুরের মায়াজালে মাতিয়ে রেখেছিলেন কিংবদন্তি এই সুরকার। তার সুরে যেন এখনও বুঁদ হয়ে থাকেন আঠারো থেকে আশি। অধ্যবসায়, শ্রম ও মেধা দিয়ে নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। সংগীতপ্রেমীদের অন্তরে চিরকাল তার সুরের মায়াজালে বেঁচে থাকবেন তিনি।

ঢাকা অর্কেস্ট্রাতে কিশোর বয়স থেকেই বেহালা বাজাতেন আলাউদ্দিন আলী। অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা তিনি। তবে শুরুটা ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে হলেও, দুই বছরের মাথায় পৌঁছে যান জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। ১৯৭৪ সালে মীর মোহাম্মদ হালিম নির্মিত সিনেমা ‘সন্ধিক্ষণ’-এ প্রথম কাজ করলেও খুব একটা সফলতা পাননি তিনি।

পরে ১৯৭৮ সালে আমজাদ হোসেনের ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ সিনেমায় আলাউদ্দিন আলীর তৈরি ‘আছেন আমার মোক্তার’ শিরোনামের গানটি ব্যাপক সাফল্য পায়। পাশাপাশি একই সিনেমার আরেকটি গান ‘হায় রে কপাল মন্দ, চোখ থাকিতে অন্ধ’ দারুণ জনপ্রিয়তা পায়।

একই বছর মুক্তি পায় ‘ফকির মজনু শাহ’ সিনেমা। ওই সিনেমায় ‘প্রেমের আগুনে’, ‘সবাই বলে বয়স বাড়ে’ আর ‘চোখের নজর এমনি কইরা’ গানগুলো আগ্রহী করে তোলে আলাউদ্দিন আলীকে।

১৯৫২ সালের ২৪ ডিসেম্বর মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামে জন্ম নেন আলাউদ্দিন আলী। তার বাবা ওস্তাদ জাভেদ আলী এবং মা জোহরা খাতুন। পিতা ওস্তাদ বাবা ও ছোট চাচা ওস্তাদ সাদেক আলীর কাছে সংগীতের হাতেখড়ি তার। আলাউদ্দিন আলীর প্রয়াত স্ত্রী নজরুল সংগীতশিল্পী সালমা সুলতানা, তার দ্বিতীয় স্ত্রী মিমি আলাউদ্দিনও একজন আধুনিক গানের শিল্পী।

আলাউদ্দিন আলীর সুরে চলচ্চিত্রের গানে যাত্রা হয়েছিল কনকচাঁপা, মাকসুদ, মিতালী মুখার্জী, কুমার বিশ্বজিৎ, সামিনা চৌধুরী, তপন চৌধুরী, আইয়ুব বাচ্চু ও হাসানের মতো শিল্পীদের।

আলাউদ্দিন আলী মূলত বেহালাবাদক ছিলেন। তিনি ষাটের দশকে বেহালাবাদক হিসেবে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন। এ ছাড়া টেলিভিশন ও বেতারে সুরকার হিসেবে নিয়মিত ছিলেন। চলচ্চিত্র, বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন মিলে প্রায় পাঁচ হাজার গানের সুর সৃষ্টি করেছেন।

আলাউদ্দিন আলীর উল্লেখযোগ্য গানগুলো হচ্ছে—‘এই দুনিয়া এখন তো আর সেই দুনিয়া নাই’, ‘আছেন আমার মোক্তার আছেন আমার ব্যারিস্টার’, ‘আমায় গেঁথে দাও না মাগো একটা পলাশ ফুলের মালা’, ‘শত জনমের স্বপ্ন তুমি আমার জীবনে এলে’, ‘কী করে বলিব আমি আমার মনে বড় জ্বালা’, ‘ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়’, ‘চোখের নজর এমনি কইরা’, ‘যেটুকু সময় তুমি থাকো কাছে মনে হয় এ দেহে প্রাণ আছে’, ‘যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়’, ‘একবার যদি কেউ ভালোবাসত’, ‘সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি’, ‘বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িত গেলাম’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো’, ‘সুখে থাকো ও আমার নন্দিনী হয়ে কারও ঘরনি’, ‘একা একা কেন ভালো লাগে না’।

দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের প্রদাহ ও রক্তে সংক্রমণের সমস্যা, ফুসফুসে টিউমারসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি ক্যানসারের চিকিৎসাও চলছিল আলাউদ্দিন আলীর। কিন্তু শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে গেলে ২০২০ সালের ৮ আগস্ট তাকে মহাখালীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ আগস্ট তিনি মারা যান তিনি।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

85,000FansLike
285,000SubscribersSubscribe

Latest Articles